1. [email protected] : শেয়ারখবর : শেয়ারখবর
  2. [email protected] : Admin : Admin
  3. [email protected] : muzahid : muzahid
  4. [email protected] : nayan : nayan
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন

ক্রমাগত লোকসানের কারণে অস্তিত্ব সংকটে জিকিউ বলপেন

  • আপডেট সময় : শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২০
  • ৪০৯ বার দেখা হয়েছে
gq- (1)

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিবিধ খাতের কোম্পানি জিকিউ বলপেন গত কয়েক বছর যাবত পরিচালন লোকসানের মধ্যে রয়েছে। উৎপাদিত পণ্যে ধারাবাহিক লোকসানের কারণে বিকল্প বিনিয়োগে ঝোঁক বাড়ায় কোম্পানিটি। কিন্তু কোন খাতেই সুবিধা করতে পারছিল না। অবশেষে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে কোম্পানিটি। শেয়ার ব্যবসায় কয়েক বছর ভালো মুনাফায় থাকলেও গত দুই বছর যাবত লোকসান করতে থাকে কোম্পানিটি। ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে বড় লোকসানের কবলে পড়ে কোম্পানিটি। এরই ধারবাহিকতায় ২০১৮-১৯ হিসাব বছর এবং সদ্য বিদায়ী ২০১৯-২০ হিসাব বছরেও লোকসান অব্যাহত থাকে কোম্পানিটির। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।

দেশের বাজারে বলপেন উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮১ সালে যাত্রা শুরু হয় জিকিউ বলপেনের। প্রায় ৩০ বছর ভালো ব্যবসা করলেও ২০১২ সালের পর থেকে নানামুখী চ্যালেঞ্জে পণ্যের বাজার হারাতে শুরু করে কোম্পানিটি। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১২ সালে কোম্পানিটি পণ্য বিক্রি থেকে আয় করে প্রায় ২১ কোটি টাকা। পরের বছর আয় নেমে যায় ১৬ কোটি টাকায়। ২০১৪ সালে পণ্য বিক্রি থেকে আয় সামান্য বাড়লেও পরের বছর থেকে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে কোম্পানিটি। ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে বলপেন বিক্রি নেমে আসে ১০ কোটি ৭৪ লাখ টাকায়। আর সর্বশেষ ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে বিক্রি নেমে আসে ৭ কোটি ৯২ লাখ টাকায়। ধারাবাহিকভাবে পণ্য বিক্রি কমে যাওয়ায় কোম্পানিটি পরিচালন লোকসানের মধ্যে পড়ে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয়ই হয়ে ওঠে কোম্পানির মুনাফার প্রধান উৎস। এর বাইরে ব্যাংকে রাখা স্থায়ী আমানত থেকে সুদ বাবদ কিছু আয় আসে।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১২ সালে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে ১৬ কোটি ৯ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে জিকিউ বলপেন। পরের বছর এ বিনিয়োগ দাঁড়ায় ১৭ কোটি ৯০ লাখ টাকায়। প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগের প্রায় ৯০ শতাংশই হয় ব্যাংক খাতের শেয়ারে। আর এ খাতের শেয়ারের দর বাড়ায় ২০১৩ সালে তাদের বিনিয়োগ করা সিকিউরিটিজের বাজার মূল্য দাঁড়ায় ২৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকায়। ফলে অনিরূপিত মুনাফা (আনরিয়েলাইজড গেইন) হয় ১৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। তবে বাজার পরিস্থিতি নেতিবাচক থাকায় ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচায় লোকসানে পড়ে যায় কোম্পানিটি। এ সময় কোম্পানির নিট লোকসান হয় এক কোটি টাকা।

২০১৬-১৭ হিসাব বছরে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি কিছুটা ভালো থাকায় শেয়ার কেনাবেচা থেকে কোম্পানির মুনাফা হয় ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর বাইরে ধারণকৃত শেয়ারের বিপরীতে নগদ লভ্যাংশ হিসেবে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা আয় আসে। আর স্থায়ী আমানত থেকে সুদ বাবদ আয় হয় ৪৯ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে এ সময় অপরিচালন আয় হয় ৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে কোম্পানির পণ্য বিক্রি থেকে আয় হয় ১০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আর পণ্য উৎপাদন ও প্রশাসনিক ব্যয়ের পর কোম্পানির পরিচালন লোকসান দাঁড়ায় ৪ কোটি ৬ লাখ টাকায়। তবে পুঁজিবাজার থেকে আসা আয়ের কারণে কোম্পানিটি ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা নিট মুনাফায় থাকে।

তবে ২০১৭-১৮ হিসাব বছর পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নেতিবাচক থাকায় কোম্পানি বড় লোকসানে পড়ে যায়। এ সময় পুঁজিবাজার থেকে প্রত্যাশিত মুনাফা না আসায় পরিচালন লোকসান সামাল দিতে পারেনি কোম্পানিটি। এ সময় স্থায়ী আমানত থেকে প্রাপ্ত সুদ, ধারণ করা সিকিউরিটজ থেকে প্রাপ্ত নগদ লভ্যাংশ ও শেয়ার কেনাবেচা থেকে আয় হয় ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৭০ শতাংশ কম। আর কোম্পানির পণ্য বিক্রি থেকে আয় আরও কমে যাওয়ায় পরিচালন লোকসান দাঁড়ায় ৫ কোটি ৬২ লাখ টাকায়। ফলে ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট লোকসান দাঁড়ায় ৫ টাকা ১২ পযসা।

 তবে ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে কোম্পানিটির লোকসান কিছুটা কমে আসে। এ সময়ে পুঁজিবাজার থেকে কোম্পানিটির মুনাফা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। ফলে ওই বছর শেয়ারপ্রতি লোকসান কমে দাঁড়ায় ১ টাকা ৭২ পয়সায়।   

এর ধারাবাহিকতায় সদ্য বিদায়ী ২০১৯-২০ হিসাব বছরেও কোম্পানিটির লোকসান অব্যাহত থাকে। আলোচ্য হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ৪৭ পয়সা, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ২১ পয়সা এবং তৃতীয় প্রান্তিকে ৮১ পয়সা। তিন প্রান্তিক (জুলাই, ২০১৯ হতে মার্চ, ২০২০ পর্যন্ত) মিলে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়ায় ১ টাকা ৪৯ পয়সা।

এ বিষয়ে কোম্পানির একজন কর্মকর্তা জানান, গত কয়েক বছর ধরেই পণ্য বিক্রি অব্যাহতভাবে কমছে। এতে পরিচালন লোকসানে পড়েছে কোম্পানিটি। তবে এ সময়ে পুঁজিবাজারে বিভিন্ন সিকিউরিটিজ থেকে প্রাপ্ত আয়ই কোম্পানিকে টিকিয়ে রাখছে। ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ওপরই কোম্পানিটি মুনাফায় থাকবে কি না, তা মূলত নির্ভর করছে।

কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে কোম্পানিটির ব্যবসা বহুমুখীকরণের উদ্যোগ হিসেবে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রী উৎপাদনের ইউনিট স্থাপন করে। তবে পরের বছর ইউনিটটি অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া জিকিউ গ্রুপের ছয় কোম্পানিতে কোম্পানিটির ৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। যদিও এ বিনিয়োগ থেকেও কোম্পানির তেমন কোনো মুনাফা আসছে না। ফলে সার্বিকভাবে কোম্পানিটি অস্তিত্ব সংকটের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ